প্রিন্ট এর তারিখ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ২৮ নভেম্বর ২০২৫
রেলের দুর্নীতি হলে দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের: মনিরুজ্জামান মনিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ||
রেল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) আগ্রাবাদের সড়ক ভবনে সড়ক ও রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন—“শুধু ৮ লেনকে ১০ লেনে রূপান্তর করলেই যানজট কমবে—এই ধারণা ভুল। দেশের পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের অন্তত ২০ শতাংশ রেল ও নৌপথে স্থানান্তর করতে হবে।”এ সময় তিনি রেল খাতে “ভয়ংকর দুর্নীতি”র অভিযোগ তুলে বলেন—“রেলে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক পদ সৃষ্টি করে দুর্নীতির পথ তৈরি করা হয়েছে। গুরুত্বহীন প্রকল্প নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দোহাজারী–চট্টগ্রাম রুটে ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে।”তিনি আরও দাবি করেন—“রেলের লোকোমোটিভ নেই, কোচ নেই—এগুলোর পেছনেও দুর্নীতি গেঁথে ছিল।”একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে নতুন রেলপথ নির্মাণের পরও যাত্রী না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।উপদেষ্টার বক্তব্যে পাল্টা বিশ্লেষণঃ“রেলের দুর্নীতির দায় কর্মকর্তাদের নয়—দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের” — মনিরুজ্জামান মনিরউপদেষ্টার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেছেন “রেলে যদি সত্যিই ভয়াবহ দুর্নীতি হয়ে থাকে, তার দায় কোনোভাবেই রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নয়। দায় সরাসরি তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের, এবং বর্তমানেও যেসব অনিয়ম হচ্ছে—সেগুলোর দায়ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে।”তিনি আরও বলেন ১. ‘রেলের মেগা দুর্নীতি’—এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে হয়েছেকারণ— • তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, • রেলপথ মন্ত্রী, • এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতারামেগাপ্রকল্প অনুমোদন, বাজেট বৃদ্ধি, টেন্ডার পাস এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ—সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।রেলের কোনো কর্মকর্তা বা প্রকৌশলী এককভাবে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করতে পারেন না। “সবই হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নির্দেশে”—বলেছেন মনিরুজ্জামান মনির। ২. মেগাপ্রকল্প অনুমোদন হয়েছে ECNEC-এ—যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন, দোহাজারী–চট্টগ্রাম রুট, লোকোমোটিভ–কোচ ক্রয়—সব প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে ECNEC সভায়।তাই মনিরুজ্জামান মনির প্রশ্ন রাখেন— • “কোথায় রেল কর্মকর্তাদের একক ভূমিকা?” • “কারা বাজেট বাড়িয়েছে?” • “কারা প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে?” • “কারা বিদেশ সফর ও অতিরিক্ত ব্যয় অনুমোদন করেছে?”তিনি বলেন, “যেখানে রাজনৈতিক সই ছাড়া একটি টাকাও ছাড় হয় না, সেখানে দুর্নীতির দায় কর্মকর্তাদের ওপর চাপানো—একটি রাজনৈতিক নাটক।”৩. প্রকল্প পরিচালক (PD) পদ—রেলের নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সৃষ্টিরেলের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কাঠামোয় প্রকল্প পরিচালক (PD) পদ ছিল না।এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে চাপিয়ে দেওয়া হয়—যার মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয়, কমিশন বাণিজ্য এবং অনিয়মের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।“এই দুর্নীতির পথ তৈরি করেছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব—অতএব দায়ও তাদেরই,” বলেন মনিরুজ্জামান মনির।“কার আমলে, কোন সইয়ে প্রকল্পগুলো হয়েছিল—তা প্রকাশ করা হোক”মনিরুজ্জামান মনির বলেন “রেলের যন্ত্রাংশ, লোকোমোটিভ, কোচ—সবকিছুর সংকট রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফল। কারণ রেলে যেসব ঠিকাদার কাজ করে, তারাও রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। কর্মকর্তারা বাধ্য হয়ে তাদের নির্দেশ পালন করেন।”৫ আগস্টের পর নতুন দুর্নীতি ও অনিয়ম—রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবমনিরুজ্জামান মনির সতর্ক করে বলেন— • ৫ আগস্টের পর থেকেই রেলে পদোন্নতি বাণিজ্য, • বদলি বাণিজ্য, • ফাইল আটকে রাখা, • সুপারিশ বাণিজ্য,রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।“রেলওয়ে কর্মকর্তারা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কাছে অসহায়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের দিয়ে সিদ্ধান্ত করানো হচ্ছে”—বলেছেন তিনি।ট্রেড ইউনিয়নের অনিয়ম—রেলকে ব্যক্তিগত ব্যবসায় পরিণত করার চেষ্টাতিনি আরও বলেন—“একটি ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের আচরণ দেখে মনে হয়—বাংলাদেশ রেলওয়ে যেন তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।তারা প্রশাসনে চাপ সৃষ্টি করছে, অস্থিরতা বাড়াচ্ছে এবং রেলের শৃঙ্খলা ভেঙে দিচ্ছে।”“যিনি সিদ্ধান্ত নেন—দায়ও তারই” — মনিরুজ্জামান মনির**মনিরুজ্জামান মনিরের সোজা বক্তব্য “রেলকে ধ্বংস করেছে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, কমিশন বাণিজ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব। কর্মকর্তারা শুধু নির্দেশ পালন করেন।রেলকে বাঁচাতে হলে—সবার আগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।দায় কর্মকর্তা নয়—দায় যাদের হাতে সিদ্ধান্ত, তাদেরই।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মো: মনিরুজ্জামান (মনির)
কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক রেলওয়ে বার্তা । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত