প্রিন্ট এর তারিখ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নদী ও সড়কেই এলো ভারী যন্ত্র, তবে কেন রূপপুর রেলস্টেশন?া
নিজস্ব প্রতিবেদক ||
২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন ও রেলপথ নির্মাণকাজ। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য দেখানো হয়েছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালপত্র পরিবহন। কিন্তু নির্মাণ শেষ হওয়ার তিন বছর পার হলেও এই স্টেশন দিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো মালবাহী ট্রেন চলাচল করেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—৩৩৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?মাস্টার পরিকল্পনায় নেই, তবু প্রকল্প অনুমোদনতথ্য অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাস্টার ট্রান্সপোর্টেশন পরিকল্পনায় এই রেল সংযোগের কোনো উল্লেখ ছিল না। তবুও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের যুক্তি দেখিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কাজ পায় ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গঠিত স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স, ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন (বাংলাদেশ) ও জিটিপি ইনফ্রাপ্রজেক্টস (ভারত)।বিশাল অবকাঠামো, কিন্তু নেই কার্যক্রমপ্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে রূপপুর পর্যন্ত ১৩টি লেভেল ক্রসিং, সাতটি বক্স কালভার্ট এবং আধুনিক কম্পিউটার বেজ সিগন্যালিং ও কালার লাইট সিস্টেম স্থাপন করা হয়। সব কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। তবে নির্মাণ শেষে রেলপথ ও স্টেশন কোনো বাণিজ্যিক বা প্রকল্পগত কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে না।২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পর থেকেই স্টেশনটি কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে আছে।নদী ও সড়কপথেই এলো যন্ত্রপাতিঅভিযোগ রয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি শুরু থেকেই নদীপথ ও সড়কপথে পরিবহন করা হয়েছে। রেলপথ ব্যবহারের প্রয়োজনই পড়েনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—যদি রেল ব্যবহারের পরিকল্পনাই না থাকে, তবে কেন এত ব্যয়বহুল রেলস্টেশন ও রেললাইন নির্মাণ করা হলো?সরেজমিনে চিত্র: ঝাঁ-চকচকে, কিন্তু তালাবদ্ধসম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার তীরে দৃষ্টিনন্দন দোতলা ভবন, আধুনিক প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন ইয়ার্ডে সারি সারি ওয়াগন। কিন্তু নেই ট্রেনের আনাগোনা। টিকিট কাউন্টার, গুডস বুকিং রুম, ভিআইপি রুম, ওয়েটিং রুমসহ সব কক্ষ তালাবদ্ধ। নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া কাউকে দেখা যায় না। অযত্নে নষ্ট হচ্ছে শতকোটি টাকার যন্ত্রপাতি।স্থানীয়দের ক্ষোভস্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন,“তিন বছরেও কোনো ট্রেন চলেনি। কখনো ব্যবহার হবে কি না জানি না। নাকি লুটপাটের জন্যই এই প্রকল্প করা হয়েছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।”রূপপুর কর্তৃপক্ষও জানে নারূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান জানান,“বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাস্টার ট্রান্সপোর্টেশন পরিকল্পনায় এই রেললাইন ছিল না। কেন এটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি আমাদেরও জানা নেই।”রেলওয়ের বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তাপাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খান বলেন, ঈশ্বরদী ইপিজেড ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্টেশনটির সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়লে এই স্টেশন কাজে লাগতে পারে।তবে আপাতত বাস্তবতা হলো—নদী ও সড়কেই এলো ভারী যন্ত্র, অথচ ৩৩৬ কোটি টাকার রেলস্টেশন পড়ে আছে অব্যবহৃত।অডিট আপত্তি ও দুদকের অনুসন্ধানউল্লেখ্য, ২০২০ সালে রূপপুর রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণে অর্থ অপচয় ও অনিয়মের অভিযোগে অডিট আপত্তি ওঠে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই প্রকল্প নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মো: মনিরুজ্জামান (মনির)
কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক রেলওয়ে বার্তা । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত